বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৪

মনুষ্যত্বঃহৃদয়,মন ও বিবেক— রায়ান নূর

শুরুতে একটা উড়ো ভাবনা মনে আসলো যে মন, হৃদয় ও বিবেক ৷ তাহলে প্রশ্নটা এই তা হল এই তিনটি ইন্দ্রিয়গ্রাহী জিনিস কি এক ? মানুষের প্রধান ধর্ম মনুষ্যত্ব ৷ যার মনুষ্যত্ব নেই তাকে মানুষের কোনো শ্রেণিতে রাখা আদৌ কি সম্ভব? মনুষ্যত্বই হল মানব ধর্ম ৷ মানবধর্মকে সবার আগে স্থান দিতে হয় ৷ আর এই মানবধর্মকে গন্তব্যে নিয়ে যায় ঐশীধর্ম ৷ মানব ধর্ম যার মনে বাসা বাধেনা তাকে কোন ঐশীধর্ম পথ দেখাতে পারে না ৷ পার্থিব ধর্ম বলে কিছু নেই ৷ঐশী ধর্মের অনুপস্থিতিতে মনুষ্যত্বজাত ধর্মই প্রভাব বিস্তার করে ৷ একটা সুত্র যাচাই করে দেখা যাক মনুষ্যত্বের দ্বন্দ্ব ৷ যদি কেউ রাজার আসনে বসে তাহলে প্রথম সে কি করে ৷ সে যদি জ্ঞানী হয় আর ন্যায় হয় তবে তার কাজ হয় সম উত্তরাধিকারীকে হত্যা করা ৷যদিও হোক আপনজন আর ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে তা জানা যায় ৷ রাজ্যের প্রজার কল্যাণে তাকে এই অপ্রিয় কাজটি করতে হয় ৷ নিজ পিতা,কিংবা মাতা কিংবা ভাই কিংবা বোন ৷ সকলেই তাকে পাষন্ড আর কলঙ্কিত বলে অভিহিত করে ৷ মনুষ্যত্বের দ্বন্দ্ব চরমে যায় যখন বিবেক ক্রিয়াশীল হয় ৷ কারো আবেগে এই ঘটনা তাকে নিন্দিত করবে আবার কেউ নন্দিত করবে ৷ তার কারণ এই সকলের মনুষ্যত্ববোধ একই পথে গমন করে না ৷ এ কারণে ঐশী ও স্থায়ী ধর্মের আগমন এই দ্বন্দ্বকে প্রশমন করার জন্য ৷ কেউ আবেগ দ্বারা চালিত,কেউ মন দ্বারা, কেউ বিবেকদ্বারা ৷ আবেগ বেশী হলে বিবেক ন্যায়বিচার করতে পারেনা ৷ মন চিরকালই অস্থিতিশীল ও দুরন্ত ৷ যে কোন সময় তার ভাবনা পাল্টে ৷ আবেগ বেশি অনুভূত হলে হৃদয়ে আসন গাড়ে ৷ আর বিবেক তখনো স্থির থাকে ৷ বিবেক কেবল তখনই জেগে উঠবে কোন ঘটনার দ্বন্দ্বে যখন তাকে কোন প্রশ্ন করা হবে ৷ প্রশ্ন ছাড়া বিবেক ঘুমন্ত ৷ কেবল প্রশ্ন করলেই সঠিক বিচার করবে আর তার ভালো দিক নির্দেশ করবে এবং মনের নিয়ন্ত্রন নেবে,হৃদয়ের নয় ৷ তুমি কাওকে হত্যা করে বিবেককে প্রশ্ন করবে 1৷তুমি কেন তাকে হত্যা করলে? 2৷ তার দোষ কতটুকু ছিল? 3৷ তুমি তাকে হত্যা করে ঠিক করলে? বিবেক তখন যাচাই করবে ৷ তাই সকলে এক বোধ সম্পন্ন নয় ৷ তোমার চোখে যা ঠিক অন্যের চোখে তা ঠিক নাও হতে পারে ৷ রাজা ও প্রজার তফাৎ এখানেই ৷ একজন বিচারক নিজ আসনে বসে কখনো হৃদয়বৃত্তি দ্বারা চালিত হবেন না কেননা তার আসনকে কলঙ্কিত করবে সে ৷ কেবল বিবেকই আসনের যোগ্য ৷ রাজার মুকুট ও সিংহাসন তাই নির্ধারিত ৷ এই মুকুট যার শোভা পাবে সেই আনুগত্যপ্রাপ্য ৷ এই নীতি ইতিহাসের শুরু থেকে কেননা মনুষ্যত্ব এই ধর্মে এক ৷ আর এটা পার্থিব বা মনুষ্যজাত ধর্ম নয় এটা ঐশী ধর্ম ৷তাই বলতে হয় মন ,হৃদয় ও বিবেক আলাদা জিনিস ৷ আমার দর্শনে মন হল মধ্যমপন্থী ও অস্থিতিশীল ৷ হ়দয় ডানপন্থী ও স্থিতিথাপক ও আবেগচালিত৷ বিবেক মস্তিস্কজাত ও চরম শুদ্ধ ও ন্যায় বিচারক ৷এই ধারণা সকলের থাকা উচিত ৷ মানুষ শ্রেষ্ঠ জাতি ৷মনুষ্যত্ব বোধ আছে বলেই শ্রেষ্ঠ আর কারো মনুষ্যত্ব না থাকলে তাকে মানুষ আখ্যা দেওয়া যায় না ৷ স্থান,কাল ও পাত্রভেদে মন,হৃদয় ও বিবেকের সহাবস্থান থেকেই মনুষ্যত্বের উদ্ভব ৷ কোন একটার অচলাবস্থা মনুষ্যত্বের দরজা বন্ধ করে ৷ মনুষ্যত্বের দ্বন্দ্বকে ঐশী ধর্ম ছাড়া নিবারণ কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ তাই একজন সৃষ্টিকর্তা যে আছেন তা অবিশ্বাস করার মতো কোন যুক্তি মনুষ্যত্বে নেই ৷ এই সম্বন্ধে কোন দ্বন্দ্ব মনুষ্যত্বের নয় বরং হৃদয়ের আর মনের বিবেকের নয় ৷ তিনটির পারস্পারিক সিদ্ধান্তহীনতা হলেই তা মনুষ্যত্বের দ্বন্দ্ব ৷ মন,হৃদয় আর বিবেকই একজন মানুষকে মানুষ হিসেেব পরিচিত করে ৷